শেয়ারবাজারে ভালো আয় করার কিছু কৌশল !
Author: Sanjir Islam Dewan
Published on: 17/Jan/2022
শেয়ারবাজার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা। এখানে রাতারাতি মুনাফা তোলার যেমন অবারিত সুযোগ রয়েছে, তেমনি অল্প সময়ের মধ্যে পথে বসারও উপক্রম হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা বিদ্যমান। এখানে সকালে বিনিয়োগ করলেই বিকালে লাভ-ক্ষতির হিসাব করা যায়। যা অন্য কোন ব্যবসায় এতো সহজে সম্ভব হয় না।
অনেক বিনিয়োগকারীরা প্রায়ই আক্ষেপ করেন, তারা শেয়ার কিনলেই দাম কমে যায়। আর বিক্রি করলে দাম বেড়ে যায়। তারা বুক ভরা হতাশা নিয়েই এই কথাগুলো বলেন। কিন্তু আসলে তারা কি করেন? শেয়ারের দাম কমে যাওয়ার ব্যাপারটি কি সবার ক্ষেত্রে ঘটে নাকি কারো কারো ক্ষেত্রে ঘটে। আসলে যারা সঠিক দামে শেয়ার কিনতে পারেন না, তাদেরই কেনার পর দাম কমে যায়। আবার যারা সময়মতো শেয়ার বিক্রি করতে পারেন না, তাদের বিক্রি করার পর শেয়ারের দাম বেড়ে যায়।
তাহলে শেয়ার ব্যবসায় সফলতা লাভের অন্তরায় কোথায়?
মুলত কিছু ভ্রান্ত ধারণায় শেয়ার ব্যবসায় ভরাডুবি হয় যা সফলতার পেছনে পথ আগলে রাখে। কিছু বিষয় আজকে তুলে ধরব। বিনিয়োগকারীরা এই বিষয়গুলো যদি মনে রাখেন তাহলে সফলতা লাভের পথে এগিয়ে যেতে পারেন।
সব পরিস্থিতিতে একই কৌশলকে বেদবাক্য মনে করা: ‘শেয়ারের সংখ্যা কম হলে দর বৃদ্ধি পাবে, বেশি হলে দাম বাড়বে না, এজিএম এর সময় এসেছে তাই দাম বাড়বে। পঁচা শেয়ার বা ব্যবসায়িক অবস্থা যত বেশি খারাপ হওয়ার খবর প্রকাশিত হবে শেয়ারের দর তত বেশি বৃদ্ধি পাবে, বিক্রী না করে ধরে রাখলেই লাভ পাওয়া যাবে’- এ ধরনের বহুবিধ ধারণার কোনো একটিকে সকল সময়ের সকল পরিস্থিতিতে শেয়ারের দর হ্রাস বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান বা একমাত্র কারণ বা বিবেচ্য বিষয় মনে করে অনেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকেন।
প্রকৃতপক্ষে এমন কোনো একক নির্দিষ্ট কারণ নেই যার ফলে সব সময়ে সব পরিস্থিতিতে যেকোনো শেয়ারের দর তাৎক্ষণিকভাবে হ্রাস বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়ে থাকে। অবশ্য এ যুক্তির কিছু বিরল ব্যতিক্রমও রয়েছে। এ অবস্থায় কোনো এক বিশেষ সময়ে বিশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনাপূর্বক ট্রেন্ড বা ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণের আলোকে শেয়ার কেনা বেচা করা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিন।
শেয়ার দর গড় করার ভ্রান্ত ধারণা: গড় করার ভ্রান্ত ধারণা শেয়ার বাজারে বহুল প্রচলিত। আপনি গড় করার জন্য যে দামে একটি শেয়ার ক্রয় করছেন ঐ কোম্পানির শেয়ারের দর যদি পরবর্তীতে আরও পড়ে যায় তাহলে বেশি দামে ক্রয় করে গড় করার অর্থ কি আর্থিক ক্ষতির সম্মখীন হওয়া নয়? একটি বিশেষ সময়ে ঐ শেয়ারটির সর্বনিম্ন বাজার দর কত হওয়া উচিত তা বিশ্লেষণে যদি আপনি দক্ষ হন তাহলেই গড় করার জন্য বিশেষ দরে ঐ শেয়ারটি ক্রয় করা যেতে পারে।
তবে এক্ষেত্রে গড় করার জন্য আপনি যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করছেন, অন্য কোনো শেয়ারে ঐ পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে যদি আরও বেশি প্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকে, তাহলে গড় করার ধারণা বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি সম্ভাবনাময় শেয়ারটিতে বিনিয়োগ করাই উত্তম। এভাবে ঝুঁকির মাত্রাকেও কমানো যায়। অবশ্য সুচিন্তিত বিশ্লেষণ ভিত্তিক গড় করার কৌশলটি শেয়ার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি কার্যকর ও ফলপ্রসূ কৌশল, বিশেষভাবে চাঙ্গা বাজারে ট্রেন্ড বিশ্লেষণভিত্তিক কেনা বেচার ক্ষেত্রে।
কেনা বেচা হয় না এমন শেয়ারে বিনিয়োগ করা: সব সময় কেনা বেচা হয় না এমন শেয়ার না কেনাই ভালো এটা একটি বিজ্ঞজনোচিত পরামর্শ। তবে এই ধারণার ভুল ব্যাখ্যা করে মাত্র ২/১টি কোম্পানির শেয়ার কেনা বেচাতে সীমাবদ্ধ থাকা সমীচীন নয়। ঢাকা ও চট্টগ্রাম ষ্টক এক্সচেঞ্জে প্রতিদিন নিয়মিতভাবে তিন শতাধিক কোম্পানির শেয়ার কেনা বেচা হয়। তাই নিয়মিত লেনদেন হয়, এমন শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে। যাতে চাইলে শেয়ার কেনাও যায়, আবার বিক্রি করাও যায়। তবে সর্বাধিক শেয়ার কেনা বেচা হয়, এমন শেয়ারেই বিনিয়োগ করা বুদ্ধিমানের কাজ--এই ধারণাও যুক্তিযুক্ত নয়।
বেশি লেনদেন হয় এমন অতি অল্প সংখ্যক কোম্পানির বাহিরে অতি সস্তায় বেশ কিছু শেয়ার ক্রয় করার সুযোগ প্রায়ই সৃষ্টি হয়, যেখানে বিনিয়োগ করে অনেকে ঝুঁকিমুক্তভাবে অপেক্ষাকৃত বেশি মাত্রায় লাভবান হয়ে থাকেন। অবশ্য একথাও মনে রাখতে হবে যে, একই সঙ্গে প্রচুর সংখ্যক কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করা ও ম্যানেজ করা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না। সঠিক দর বিবেচনা না করে
ফান্ডামেন্টালকে একমাত্র বিবেচ্য বিষয় হিসেবে গণ্য করা: শেয়ার ব্যবসায়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে যেমন নূন্যতম কোম্পানি ফান্ডামেন্টাল বিবেচনাতে নেয়া প্রয়োজন, তেমনি ফান্ডামেন্টালের দিক বিবেচনা করার ক্ষেত্রে ঝুঁকির মাত্রার দিকও বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে। শেয়ারটির বাজার দর অনেক বেশি কিনা, সঠিক দর কত হওয়া উচিত এই সকল বিষয় বিবেচনা না করেই নামী দামী কোম্পানির শেয়ার মাত্রাতিরিক্ত বেশি দরে ক্রয় করা অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিকর।
এক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, মূলধনী লাভ, ডিভিডেন্ড বা অন্যান্য প্রাপ্তির বিষয় বিশেষ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট বিবেচনা করা প্রয়োজন। প্রতিটি শেয়ার কেনা বেচা করার ক্ষেত্রেই সঠিক দর বিশ্লেষণের বিষয়টি যথাযথভাবে অবশ্যই বিবেচিত হতে হবে।
ফেস ভ্যালু ও কম দাম এবং বেশি দামের ভ্রান্ত ধারণা: এক ব্যক্তি কয়েক লক্ষ টাকা পুঁজির সমুদয় অর্থ নির্দিষ্ট একটি শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন। ঐ কোম্পানিটির উপর এত বেশি আগ্রহ কেন এই প্রশ্নের জবাবে জানা যায়, তার দৃষ্টিতে সংশ্লিষ্ট শেয়ারটির দর কম। তিন চার হাজার টাকা মূল্যের শেয়ারও যেহেতু বাজারে বিক্রী হচ্ছে, তাই ৫০ টাকা দরে একটি শেয়ার ক্রয় করা তার যুক্তিতে সস্তাই বটে। কিন্তু বাস্তবে বিভিন্ন ধরনের শেয়ারসমূহকে এভাবে তুলনা করার কোন ভিত্তি নেই।
বাস্তবে চিরস্থায়ী কম দাম এবং বেশি দাম বলতে কিছু নেই। ব্যবসায়িক সফলতা, ব্যর্থতা, ভবিষ্যৎ বিষয়ক সম্ভাবনা/হতাশা ইত্যাদি বিষয়ের আলোকেই বিশেষ পরিস্থিতি বিশেষভাবে বিবেচনার ভিত্তিতে শেয়ারের উচিত দর নির্ধারিত হয়।
কোম্পানির লাভ-ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস বৃদ্ধির প্রতি দৃষ্টি না রাখা: দক্ষ শেয়ার ব্যবসায়িদের অনেকে নূন্যতম কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল বিবেচনা ব্যতীত কোনো শেয়ার ক্রয় করেন না। বিজ্ঞ ব্যবসায়িগণ কোনো শেয়ারের ব্যবসায়িক ক্ষতির খবরে তাৎক্ষণিকভাবে শেয়ারটি বিক্রি করে দেন। অন্যদিকে টেকসই ও ক্রমবর্ধমান লাভের ইঙ্গিত পেয়ে সেই শেয়ার অপেক্ষাকৃত সস্তায় ক্রয় করে ঝুঁকিমুক্তভাবে প্রচুর লাভ অর্জন করেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ব্যবসায়িক মন্দাবস্থা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনাও বিবেচনা করুন।
দর বৃদ্ধি সব সময়ের জন্য শুভ লক্ষণ নয়: এক সময়ের নামী দামী ব্যবসা সফল কোম্পানিও বর্তমানে লোকসানের সম্মুখীন হতে পারে। কোনো একটি কোম্পানি দীর্ঘস্থায়ী মন্দা কবলিত হয়ে পড়তে পারে। অথচ বর্তমান লোকসানের খবর প্রকাশ হওয়ার পূর্বেই কিছু ব্যক্তি যাদের কাছে প্রচুর শেয়ার রয়েছে তারা সাময়িকভাবে কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টি করে, শেয়ারটির দর বাড়িয়ে তুলতে পারেন কিম্বা অন্য কোনো কারণে শেয়ারটির দর বৃদ্ধি পেতে পারে।
যে বৃদ্ধি টেকসই হয় না এবং অনেক ব্যবসায়ী এই ধরনের শেয়ার বেশি দামে ক্রয় করে অনেক ক্ষেত্রে প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হন। বিজ্ঞ ব্যবসায়ীদের সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এই ধরণের শেয়ারের দর বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ডিভিডেন্ডের ভিত্তিতে শেয়ার ক্রয় করা: ডিভিডেন্ডই শেয়ার ক্রয়ের জন্য একমাত্র বিবেচ্য বিষয় হতে পারে না। ডিভিডেন্ড প্রদানের ধারা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা, ব্যবসায়িক অবস্থা, ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পরিবর্তন এই ধরনের বহুবিধ বিষয়ও এক্ষেত্রে বিবেচনা করতে হবে।
সবার জন্য একই কৌশল সঠিক মনে করা: শেয়ার ব্যবসাকে একটি যুদ্ধ ক্ষেত্রের সাথে তুলনা করা যায়। যুদ্ধে জয়লাভের জন্য যেমন সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন কৌশলে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিতে হয় এবং বেশি সংখ্যক সৈন্য অপেক্ষা অল্প সংখ্যক সৈন্যের ক্ষেত্রে ভিন্নতর কৌশল অবলম্বন করতে হয়, শেয়ার ব্যবসাতেও তেমন বিভিন্ন কৌশলে পোর্টফোলিও সাজাতে হয়।
Tags:
BO opening Digital Booth downloadapp IPO onlinetrading ডিজিটালব্রোকারেজহাউস ডিজিটালাইজডব্রোকারেজহাউস digitalbrokeragehouse digitalizedbrokeragehouse stockmarket CSE DSE sharemarket SharePost stockbrokeragehouse berich onlinetrade